শান্ত রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে কান্না করতে থাকে।
কতক্ষণ পরে এনির রুম থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এমন আওয়াজ শুনে শান্ত রুম থেকে বের হয়ে দেখে, আংকেল এনির সাথে চড়া কন্ঠে কথা বলতাছে। তর্ক হতে হতে এক সময় এনিকে থাপ্পর মারে।
এনিকে থাপ্পর দেওয়ার পর এনি হঠাৎ চুপ হয়ে যায়।
-আংকেল ওকে মারছেন কেন?(শান্ত)
-ও আস্তে আস্তে বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। ও যে আমার মেয়ে সেটা ভাবলে আমার কষ্ট হয়, আল্লাহ্ জানে কোন পাপের কারণে এমন মেয়ে আমাদের ঘরে জন্ম নিছে।
-থাক আপনি এসে পড়ুন বলে এনির বাবাকে শান্ত অন্য রুমে নিয়ে যায়।
কয়েকদিন পরে শপিং করার জন্য এনির বাবা এনির সাথে শান্তকে পাঠায়।
শান্ত যখন গাড়ি স্টার্ট করলো তখন........
-ঐদিকে পার্কের কাছে নিয়া যা(এনি)
-কেন?(শান্ত)
-এই কুত্তারবাচ্চা এটা কি তোকে বলা লাগবে? তোকে আমার সাথে পাঠায়ছে আমি যা বলি তা করবি
-আমাকে বকলেও আমার মা-বাবাকে বকা দিবানা
-ওরে মাহহ রে,তুই কোন হাজী সাহেবের পোলা?
-আমার বাবার কথা মনে নাই কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার মা আমাকে অনেক আদর করতো, ছোট বলের মধ্যে পানি নিয়ে আমাকে গোসল করিয়ে দিতো।
-হয়ছে তোর বকবকানি বন্ধ করে পার্কের কাছে নিয়া যা।
পার্কে নিয়া যাওয়ার পরে একটা ছেলে এসে এনিকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে।
শান্ত ভাবে হয়তো এটা ওর বয়ফ্রেন্ড।
-তোমার কাজিন নাকি?(ছেলেটা)
-না, এটা আমার সার্ভেন্ট(চাকর)(এনি)
-ওহহহ
-হুম চলো বলে হাত ধরে একটা দোলনাতে বসে।
কতক্ষণ কথা বলার পরে আসার সময় আরেকবার হাগ দিয়ে গাড়িতে উঠে পরে।
-তোমার বয়ফ্রেন্ড?
-এটা তোর না জানলেও চলবে।
-ওহহ তা ও কথা
-শপিংমলে যা
-ওকে।
শপিং করে ফেরার পরে দুজন রেস্টুরেন্টে ঢুকে।
এনি টেবিলে বসার পরে শান্ত যখন বসে।
-এখানে বসলি কেন?(এনি)
-তুমি বসছো তাই
-জানোছ না তোর ফেইস দেখলে আমার গাঁয়ে জ্বর উঠে
-ওহহ স্যরি বলে শান্ত অন্য টেবিলে গিয়ে বসে।
শান্ত সব দিক দিয়েই স্মার্ট। শান্ত এনির সাথে এক ভার্সিটিতে কেমেস্ট্রি সাবজেক্টে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ালেখা করে।
শান্ত এত অবহেলার মাঝেও সে তার পড়ালেখা ঠিকভাবে চালিয়ে নেয়।
ভার্সিটিতে ক্লাস করে কম। আর কি কারনে কম করে সেটা তাদের ভিসি ও জানে। সবসময় ভালো রেজাল্ট করার কারণে ভিসি ও শান্তর সবকিছু ভেবে সেক্রিফাইস করে।
সামনে তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা তাই পড়ালেখার একটু বেশিই চাপ।
শান্ত ৭-৮ দিন পরে ভার্সিটিতে আসে।ক্যাম্পাসে এসে দেখে এনি একটা গাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
শান্ত সিড়িতে বসে বসে একটা বই হাতাহাতি করছে এমন সময় একটা মেয়ে এসে শান্তর পাশে বসে।
-হাই শান্ত
-হাই
-কেমন আছো?(মেয়েটি শান্তর ক্লাসমেট, নাম নিধি)
-আলহামদুলিল্লাহ্ তুমি কেমন আছো?
-হুমম ভালো, তোমার উপস্থিতি কম কেনো?
-পার্সোনাল প্রবলেম
-ডোন্ট মাইন্ড একটা কথা বলি?
-হুম শিওর
-টাকার প্রবলেম নাকি?
-আরে না
-তাহলে?
-বললাম না পার্সোনাল প্রবলেম
-ওহ
-হুম
-ওকে, ক্লাসে যাবানা?
-হুমম চলো
ক্লাসে গিয়ে দুজন এক টেবিলে বসে।
শান্ত খেয়াল করে দেখে এনি তাদের দিকে চেয়ে আছে।
ক্লাস শেষ হওয়ার পরে বাসায় যায়।
বিকালের দিকে শান্ত ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে থাকে তখন এনি পিছন দিয়ে এসে.......
-ভালোই তো প্রেম করছিস(এনি)
-প্রেম না।
-কি?
-যাস্ট হাই হ্যালো
-হাই হ্যালো করতে কারো ২ঘন্টা লাগে জানা ছিলো না
-ফ্রেন্ড হিসাবে কথা তো বলতেই পারে।
-হুম তা অবশ্য ঠিক। আর তোর মতো ছোটলোকের সাথে কে প্রেম করবে?
-এই কথা শুনে শান্ত তখন মুচকি হাসে
-তোর এই হাসিটা দেখলে আমার গায়ে ১০৫ ডিগ্রির জ্বর উঠে।
-বায়
-এই শোন,
-কি
-কাল আমার বান্ধবীর হলুদ সন্ধ্যা, সেখানে আমার সাথে যেতে হবে
-অপমান করার জন্য নিবা?
-নাহ,
-তো?
-এত প্রশ্ন করিস কেন?
-হুম ছোট লোকদের প্রশ্ন করতে নেয়,
-হুম এইতো ভালো বুঝতে পারছিস।
-বায়
বলে শান্ত ছাদ থেকে নেমে যায়।
পরের দিন এনি শান্তকে সাথে করে নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দেখে একেকবার একেকজন নাচানাচি করছে।
-দোস্ত আসতে এত দেরি করলি কেন?(এনির বান্ধুবী ফারিহা)
-রাস্তায় জ্যাম ছিলো রে।
-ওহহহ, শান্ত সেখানে গিয়ে বসো(ফারিহা)
-ওকে(শান্ত)
.
শান্তর আশে পাশের চেয়ারে এনি আর এনির কিছু বন্ধু বসে আছে।হঠাৎ একটি মেয়ে এসে শান্তর সাথে বসে।
-হাই(মেয়েটি)
-হাই
-কেমন আছো?
-ভালো
-চলো
-কোথায়?
-নিরিবিলি জায়গায়।
-কেন?
-কথা বলবো,
-না আমি যাবো না।
-ভয় পাও নাকি?
-আমার ভালো লাগে না তাই যাবোনা,এখানে ভয়ের কি হলো?
তখন মেয়েটি শান্তর কাধে হাত রাখে।
-ছাড়ুন বলছি
-না ছাড়লে কি করবা?
শান্ত তখন পিছনের দিকে চেয়ে দেখে এনির বন্ধুরা এসব দেখে হাসাহাসি করছে, শান্তর তখন বুঝার বাকি থাকলো না যে মেয়েটা কিসের জন্য তার সাথে এমন করছে।
-আমাকে এসব করে কি মজা পাও? একটু হাসাহাসি করো তাই না? আমার জায়গায় যদি তুমি থাকতে তাহলে কি করতা? আমি গরিব বলে এসব করো তাই তো?
-আসলে.....
-হয়ছে আর বলতে হবে না, এনি আমাকে সহ্য করতে পারে না।কিন্তু আমাকে সাথে করে নিয়ে আবার এখানেও আসছে।আমি আগেই জানতাম এনি আমাকে নিশ্চয় অপমান করার জন্য নিয়ে আসছে।
বলো তোমার সাথে কোথায় যেতে হবে? আড়ালে নিয়া কিছু মার খাওয়াবা তাই তো? আড়ালে নেওয়ার দরকার নেই আমার মতো ছ্যাচরা, ছোটলোক কে সবার সামনেই থাপ্পর মারা যায়। যেমন টা প্রায় সব ধনি লোকরা ই মারে। আমাকে এখানেই থাপ্পর মারো, কিচ্ছু বলবো না বলে শান্ত চোখের পানি ছেরে দেয়।
মেয়েটি এসব শুনে তার হাসি মুখটা যেনো নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়।
-স্যরি
-ছোট লোককে স্যরি বলার দরকার হয় না বলে শান্ত চেয়ার ছেড়ে উঠে গাড়িতে গিয়ে বসে থাকে।
রাত ৩টা বাজে তখন এনির মা শান্তর মোবাইলে ফোন করে।
-হ্যা আন্টি বলেন।
-বাবা অনুষ্টান কি এখনো শেষ হয় নাই?
-প্রায় শেষ।
-ওকে, তারাতারি এসে পর।
-ওকে,
শান্ত ফোন রেখে বাহিরে গিয়ে দেখে এনি সহ তার বন্ধু বান্ধবীরা নাচানাচি করছে।
শান্ত তখন নিজে নিজেই একটা হাসি দেয় আর বলে এটা-ই বুঝি বড়লোকদের নাচ।
শান্ত এনিকে ডাক দিয়ে মোবাইল দেখিয়ে ইশারা করে তখন এনি মোবাইল বের করে। দেখে তার মা তাকে অনেকগুলো কল দিয়ে রাখছে।এনি তখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে।
গাড়িতে উঠার পরে.....
-এই তারাতারি চালা(এনি)
-মদ পান করছো?
-না বিয়ার খাইছি,
-ওহহহ
-হ্যা,
শান্ত বুঝতে পারে এটা হয়তো তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। না হলে একটু হলেও মাতাল হতো কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় না সে মাতাল।
কয়েকদিন পরে শান্ত ভার্সিটিতে যায়।
ভার্সিটিতে যাওয়ার পরে
নিধির সাথে দেখা হয়।
নিধির সাথে একই টেবিলে ক্লাস করে বাসায় ফিরে।
শান্ত প্রায় সময় ই বিকালের সময় টা ছাদে কাটায়।
শান্ত ছাদে বসে বসে ভাবে, আজ যদি আমার মা-বাবা থাকতো কতো ভালো হতো।
ক্লাস করে ডিরেক্ট মায়ের বুকে ফিরতে পারতাম। মা তুমি কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলা? আমার কিছু ভালো লাগে না রে মা।মা তুমি যাওয়ার সাথে আমাকে কেন নিয়ে গেলা না?
আমার সামনে যখন বন্ধুদের মেবাইলে মা নামে সেইভ করা নাম্বারে ফোন আসে তখন অনেক খারাপ লাগে রে মা।
সবার মোবাইলে মায়ের কল আসলেও আমার মোবাইলে আসে না। হে আল্লাহ্ আমার মা-বাবাকে নিয়ে আমাকে কেন একা রেখে তাদের নিয়ে গেছো?
এসব বলতে বলতে শান্ত একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়।
কতক্ষণ পরে এনি আসে।
-ভালোই প্রেম করছিস। (এনি)
-কে?
-তুই
-কার সাথে
-ওমাহহহহহ এত ভাব নিচ্ছিস কেন?
-কে ভাব নিচ্ছে,
-নিধির সাথে যেভাবে কথা বলিস, মনে হয় অনেক আপন কেউ
- আমার ভালো লাগছেনা প্লিজ আমাকে এখন কোনো পেইন দিও না।
-কিহহহ আমি তোরে পেইন দেই?
-মাফ চাই এখন যাও
-এটা আমার বাসা, আমার যেখানে মন চায় আমি সেখানেই থাকবো, আমাকে তুই নামার কথা বলার সাহস পেলি কোথায়?
-শান্ত স্যরি বলে নিচে নেমে যায়।
রাতের খাবার খাওয়ার সময়....
.
.
#চলবে_কি??
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।
পর্ব ০২
No comments:
Post a Comment